সাংগঠনিক শৃঙ্খলা, জাতীয় সম্মেলন, শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচিসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠকে বসছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।
বিকালে সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে একই স্থানে বিকাল ৪টায় দলের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হবে। দুটি বৈঠকই সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজকের বৈঠকে দলের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা দূর করতে করণীয় এবং নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতা করা এমপি-মন্ত্রীসহ অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
এছাড়া দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা। শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচিও চূড়ান্ত হবে আজকের বৈঠকে।
দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কিছু সমস্যা আছে, দলের সাংগঠনিক পর্যায়ে।
কোথাও কোথাও সম্মেলন হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে। সেখানে সম্মেলনের কাজ সম্পন্ন করা। বিভিন্ন নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোথাও কোথাও বিদ্রোহ করেছে। ফলে দলের মধ্যে কিছুটা হলেও সংকট-অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এই বিষয়ে আমরা সিরিয়াস। এসব সংকট আমরা দ্রুত নিরসন করতে চাই। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এই বিষয়গুলো দলীয় প্রধানকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার অভিযোগ ওঠে প্রায় অর্ধশত দলীয় সংসদ সদস্য, মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে। তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে অনেকটা একতরফা এই নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থীরা হেরেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দলটি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগে নিজেদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল রয়েছে। এতে প্রায়ই ঘটছে বিশৃঙ্খল ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য।
দলীয় সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ এসব বিশৃঙ্খলা দূর করতে কঠোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে আজকের বৈঠকে। শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়া এবং আগামী সম্মেলনে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার মতো শাস্তিও আসতে পারে সূত্র জানায়।
দলের সর্বশেষ সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। সেদিন তিনি বলেন, ডিসিপ্লিন ব্রেক করার বিষয়টা যদি আশকারা পায় তাহলে ডিসিপ্লিন ব্রেক করার প্রবণতা বাড়তে থাকে।
আমরা এই বিষয়টার রাস টেনে ধরতে চাই। সেজন্য আমরা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) কাছে সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকের আগে বলেছি, এই কারণে শৃঙ্খলা ভঙ্গ হচ্ছে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীরা আশকারা পাচ্ছে। এই বিষয়টার লাগাম টেনে ধরা দরকার এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।সেটা আমরা পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ের আগেই আমাদের সভাপতিকে অবহিত করব, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। এছাড়া বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের এক অনুষ্ঠানে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কর্মী সমাবেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আগামী জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মেয়াদোত্তীর্ণ উপজেলা/পৌরসভা/ইউনিয়ন/ওয়ার্ড কমিটিগুলোর কাউন্সিল সম্পন্ন করতে বিশেষ দিকনির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সে অনুসারে মধ্য জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংগঠনের তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে আটঘাট বেঁধে মাঠে সক্রিয় হবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। আজকের বৈঠকে আগামী জাতীয় সম্মেলন ও তৃণমূলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক নেতারা নিজ নিজ বিভাগে তৃণমূলের বর্ধিত সভার সফর ও সময়সূচি দলীয় প্রধানকে অবহিত করবেন। এছাড়া বৈঠকে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ও বিভিন্ন উপকমিটি গঠনের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বৃহস্পতিবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, বৈঠকে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। তবে জাতীয় সম্মেলনের খুব বেশি দেরি নেই। এর মধ্যে আবার আছে আগস্ট মাস।
এই মাসে শোকের কর্মসূচির বাইরে সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তাই জুলাই-সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্মেলনের সার্বিক প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। ফলে আজকের বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। এদিকে প্রতি বছরের মতো এবারও শোকের মাসে মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আজকের বৈঠকে শোকের মাস আগস্টের কর্মসূচি বেশি প্রাধান্য পাবে।এর আগে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় এই কর্মসূচি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। সেখানে কিছু কর্মসূচির খসড়াও তৈরি করা হয়েছে। আজকের বৈঠকে তা চূড়ান্ত হতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগের কর্মসূচির পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কর্মসূচির সমন্বয় নিয়েও আলোচনা হবে বৈঠকে।
Leave a Reply